ঈদকে
সামনে রেখে মানিকগঞ্জের নকশি পাঞ্জাবি এখন ঢাকাসহ সারা দেশের বাজারে। আর এ
কাজে মানিকগঞ্জ জেলার প্রায় ৪০ হাজার নারী ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। নারী
শ্রমিকরা পাঞ্জাবি-ফতুয়ার ভরাট (হাতে সেলাই) কাজ করে চলেছেন দিন-রাত।
গ্রামীণ নারীরাই তাদের নিপুণ হাতে পাঞ্জাবি আর ফতুয়ার নকশা তুলে আরও বর্ণিল
করছেন। রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের নামকরা
ফ্যাশন হাউসের লোভনীয় পাঞ্জাবি ও ফতুয়ার নেপথ্যের কারিগর এখানকার নারীরাই।
এক দশকেরও বেশি সময় আগে মানিকগঞ্জে শুরু হয়েছিল পাঞ্জাবির গায়ে সুই-সুতা
দিয়ে নকশা তোলার কাজ। সে সময় ব্র্যাক মানিকগঞ্জে তাদের আয়শা আবেদ
ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে ট্রেনিং দিয়ে দুস্থ নারীদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা
করে এ সেলাই কাজের মাধ্যমে। ব্র্যাকের নিজস্ব সেলস সেন্টার আড়ংয়ের মাধ্যমে
প্রচুর চাহিদা সৃষ্টি হয় এ পাঞ্জাবির। তখন অধিকাংশ মানুষই সম্মানের চোখে
দেখত না কাজটিকে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেক শিক্ষিত তরুণ-তরুণী এ কাজে জড়িয়ে
পড়ায় এখন সেই দৃষ্টিভঙ্গি বদলে গেছে।
প্রথম
দিকে যেসব নারী ঘরের কাজ শেষে প্রচুর অবসর পেতেন, তারা বাড়তি আয়ের আশায়
হাতে তুলে নেন সুই-সুতা। কেউ ব্যক্তিগতভাবে, কেউ সম্মিলিতভাবে আবার কোথাও
এনজিও কিংবা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে শুরু হয় পাঞ্জাবির ভরাট কাজসহ বস্নক,
বাটিক ও অন্যান্য কাপড়ের কাজ। এভাবেই এক দশকে এ নকশার কাজে নীরব বিপ্লব ঘটে
গেছে মানিকগঞ্জ জেলায়। এখন প্রায় ৪০ হাজার নারী সারা বছরই জড়িত থাকেন এ
কাজে। জননী ক্র্যাফটস অ্যান্ড ফ্যাশনের মালিক জানান, তার প্রতিষ্ঠানের
মাধ্যমে ঘরে বসে সারা বছর কাজ করেন ৮ হাজার মহিলা। শিক্ষিত যুবক মাসুদ,
মিল্টন ও সুমন তিন বন্ধু মিলে গড়ে তোলেন নকশি নামের হ্যান্ডিক্র্যাফটস
প্রতিষ্ঠান। মানিকগঞ্জ শহরে এখন তাদের বিলাসবহুল দুটি শোরুম। ২ হাজার নারী
নিয়মিত পাঞ্জাবি ভরাটের কাজ করেন তাদের প্রতিষ্ঠানে। নকশি পাঞ্জাবির সুনাম
এখন সারা দেশে। এ প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনে এসেছিলেন বিশ্ববিখ্যাত ফ্যাশন
ডিজাইনার বিবি রাসেল। আয়শা আবেদ সেন্টারে কারখানায় ৫০০ ও বিভিন্ন গ্রামে ৫
হাজার মহিলা কাজ করেন।
ঢাকার
শোরুমগুলো নকশা করা পাঞ্জাবিতে তাদের নিজস্ব ব্রান্ডের স্টিকার লাগিয়ে
আভিজাত্যের গন্ধ মেখে বিক্রি করছে অভিজাত ক্রেতাদের কাছে। মানিকগঞ্জের
পাঞ্জাবি যেসব প্রতিষ্ঠানে শোভা পায় তা হচ্ছে_ ক্রে-ক্র্যাফট, অঞ্জন'স্,
বাংলার মেলা, রঙ, আবর্তনা, আড়ং, অন্যমেলা, ওজি, বাংলার রঙ, তুলি, শেকড়,
ড্রিম ফ্যাশনওয়্যার, ডাইজেন, নোঙর, ঋতু বৈচিত্র্য, নান্দনিক, দেশ কারুপণ্য,
খাদি ঘর, মনোরম ইত্যাদি।মহিলারা কখনও একত্রিত হয়ে কোনো একটি ঘরে বা শেডে
আবার কেউ কেউ খেজুর পাতার পাটি বিছিয়ে বারান্দায়, উঠানের গাছের নিচে ভরাট
কাজে ব্যস্ত থাকেন। ঘরের সব কাজ করেও নারীরা এখন বাড়তি আয় করছেন। তাদের
দাবি, পরিশ্রমের তুলনায় মজুরি কম দেয়া হয়। একটি পাঞ্জাবিতে ভরাট কাজে
মহিলারা পান ৭০ থেকে ১০০ টাকা। একটি পাঞ্জাবির কাজ শেষ করতে তাদের ৪-৫ দিন
কাজ করতে হয়। প্রতিদিন গড়ে ৬-৭ ঘণ্টা তারা কাজ করেন। কিন্তু মজুরি পান না
সন্তোষজনক হারে। পাঞ্জাবি সরবরাহকারীদের দাবি, ভরাট কাজ শুধু মানিকগঞ্জেই
হয় এবং ভরাট ও হাতের কাজের নকশা করা পাঞ্জাবির শতকরা ৭০ ভাগই মানিকগঞ্জ
থেকে সরবরাহ করা হয়। রেশম গুটি থেকে এন্ডিকটন নামে এক ধরনের সুতা থেকে
মানিকগঞ্জে পাঞ্জাবির কাপড় তৈরি করা হয়, যা দেশের অন্য কোথাও তৈরি হয় না।
ঈদ উপলক্ষে মানিকগঞ্জ থেকে এবার হাতের সেলাই ও নকশা করা প্রায় ২ লাখ
পাঞ্জাবি ও ফতুয়া সরবরাহ করা হয়েছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। সরকারি সহযোগিতা,
শোরুমগুলোর আরও আন্তরিকতা, সহজ শর্তে ঋণ প্রাপ্তির ব্যবস্থা থাকলে দিন দিন
এ শিল্পকে আরও উন্নত করে দারিদ্র্য বিমোচন ও বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করা
সম্ভব বলে মনে করেন এ শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।
এএসএম সাইফুল্লা (alokitobangladesh.com)
তথ্য সূত্রঃ http://www.valokhabor.com/index.php?option=com_content&view=article&id=2664%3A2014-07-22-16-38-58&catid=24%3A2011-10-21-07-57-54&Itemid=51