আঁখিজলে গাঁথা মালা
“যতখানি আমার করার, করেছি। বাকিটা ঈশ্বর।”
- বললেন ডাক্তারবাবু।।
- লেইজেলঃ একি বলছেন,
ডাক্তারবাবু! তবে কি আমার রোডেন গো ...
- ডাক্তারঃ লেইজেল, ধৈর্য্য ধরুন, আমি প্রাণপণ প্রচেষ্টা চালিয়ে
যাচ্ছি। তবে এটা অবশ্যই মনে রাখবেন, জন্ম, মৃত্যু, বিয়ে এসবই বিধাতাকে দিয়ে।
- লেইজেলঃ ডাক্তারবাবু,
আমি এতকিছু বুঝিনা। আমি আমার রোডেন গো কে সুস্থ দেখতে চাই। (কাঁদতে কাঁদতে)
আমি আমার রোডেন গো কে হারানোর কোন
কথাই ভাবতে পারিনা। বিখ্যাত ঔপন্যাসিক
পাবলো
কোয়েলহো বলেছেন, ‘যখন তুমি কোনো কিছু মন থেকে চাইবে, সেটা অর্জনের জন্য সারা দুনিয়া তোমার সহযোগিতায়
এগিয়ে
আসবে।’ পাবলো কোয়েলহোর বানী বুঝি আজ মিথ্যে প্রমাণ হবে?
- ডাক্তারঃ লেইজেল, আমি জেনেছি আপনি ওকে খুব ভালবাসেন। আমি জেনেছি রোডেন গো কে নিয়ে আপনি
অনেক স্বপ্ন দেখেছেন। ওকে বিয়ে করে
সুখের স্বর্গ রচনা করতে চেয়েছেন। বিয়ের দিনটাই একজন মানুষের জীবনের সবচেয়ে সুখের দিন। দুজন মানুষ একে অপরকে ভালবেসে কাছে আসে। সারা জীবন একসাথে থাকার প্রতিজ্ঞা
করে
যতদিন
না
মৃত্যু
তাদেরকে আলাদা করে দেয়।
- লেইজেলঃ রোডেন গো (ফিলিপাইনের নাগরিক) এমন একটা দিনই তার জীবনে পেতে চেয়েছিল। আগামী ৮ জুলাই রোডেনের ৩০তম জন্মদিনে
আমরা বিয়ে করব বলে ঠিক করেছি, কিন্তু একি হলো? ভাগ্যের একি নির্মম পরিহাস! তার আগেই আমাকে শুনতে হলো রোডেনের চতুর্থ স্তরের যকৃতের ক্যান্সারের কথা। ও বিধি তুমি আমাকে যেন ওর আগেই মৃত্যু দিও। আমি ওর শেষ বিদায়ের দৃশ্য দেখতে পারবনা।
হ্যাসেট গোঃ (রোডেনের ভাই) পার্থিব এই জগৎ সংসারের অকৃতিম মায়া, মমতা, ভালোবাসা কে বা ছেড়ে যেতে যায়! তবুও আমরা তো মানুষ, চলে তো যেতেই হবে। এটাই প্রকৃতির
নিয়ম। হ্যাসেট গোর যেন মনে পরে গেল কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ
ঠাকুরের ‘সোনার তরী’ কবিতার সেই দু’টি কথা “কী গভীর দুঃখে মগ্ন সমস্ত আকাশ, সমস্ত পৃথিবী। চলিতেছি যতদূর, শুনিতেছি একমাত্র মর্মান্তিক
সুর, ‘যেতে আমি দিব না তোমায়। ধরণীর প্রান্ত হতে নীলাভ্রের
সর্বপ্রান্ততীর ধ্বনিতেছে চিরকাল অনাদ্যন্ত
রবে, যেতে নাহি দিব হায় তবু যেতে দিতে হয় তবু চলে যায়…..”। আমাদের সকলকেই আজ হয়তো কাল এই ভ্রাতৃত্বের
বন্ধন
ছিড়ে
চির
বিদায়
নিতেই
হবে। হ্যাসেট গো লেইজেলকে বললেন, লেইজেল আমি রোডেনের শেষ ইচ্ছাটুকু
পূরণ করতে চাই। এক মুহূর্ত আগে
হলেও রোডেনের সাথে তোমার বিয়ে দিতে চাই। লেইজেল রাজী হলো।
পরিবার ও বন্ধু-বান্ধব, রোডেনের শেষ ইচ্ছা পূরণ করতে এগিয়ে আসল। ১২ ঘণ্টার প্রস্তুতির
পর
রোডেনের স্বপ্ন পূরণ হলো।
রোডেনের
ভাই
হ্যাসেট গো অশ্রুসজল নেত্রে বলতে লাগলেন, ওকে আমরা হাসপাতালের
বাইরে
নিয়ে
যেতে
পারিনি, তাই চার্চকেই আমরা তার কাছে নিয়ে এসেছিলাম।
কবুল বলার ১০ ঘণ্টা পরই রোডেনকে যখন জীবনের শেষ বিদায় জানাতে হলো, তখন আঁখিজলে গাঁথামালা দিয়ে রোডেনের বিদায় বেলায় লেইজেলর বিষাদসঙ্গীত...
ওগো বিধি আমার জীবনে
একি তুমি করিলে?
রূপকথার করুন গল্প তুমি
বাস্তবে ঘটালে।
আমার মনের মানুষ তুমি
নিলে ছিনিয়ে,
এখন আমি বাঁচবো বল
কি নিয়ে?
নিয়েছ কারিয়া তুমি আমার
প্রাণের প্রিয়া,
তুমিই বল আমায় কেমনে
ধরিব হিয়া?
সে যে আমার জীবন-মরণ
বাঁচার অনুরণ,
ওর বিদায়ের আগে আমায়
দিলেনা ক্যান মরণ!
*** ফিলিপাইনের নাগরিক রোডেন গো এবং লেইজেলর প্রেম কাহিনী আবলম্বনে।
মোহাম্মদ সহিদুল ইসলাম
লেখক_অন্যধারা
প্রকাশন