পৃথিবীতে
শেষ দিনের ভিডিও
তুমি আমার মুখের সামনে এমন কথা বলতে পারলে বীনা? আমি তো ভাই বলতে চাইনি, তুমিই তো আমাকে বলতে
বাধ্য করলে। আবার মুখে মুখে তর্ক করিস। ভাইয়া এটি তর্ক নয়, যা সত্য তাই বলেছি।
তাহলে তুমি সদয়কে বিয়ে করবেনা? না ভাই আমার এখন বোঝার বয়স হয়েছে, এটা অন্য কোন
বিষয় নয় যে, তুমি যা বলবে আমাকে তাই মেনে নিতে হবে। যাকে নিয়ে সারা জীবন সংসার
করতে হবে , যাকে আমি বিয়ে করবো তার সম্পর্কে আমার জানার বিষয় আছে। তাই আমি সদয়কে
বিয়ে করতে পারবোনা । আর একটা বিষয় আপনাকে জানাতে চাই, আমি হৃদয়কে ভালবাসি, তাই
বিয়ে করতে হলে ওকেই করবো।
হৃদয়কে ভালবাসার কথা শুনে বীনার ভাই তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠলেন। ভিতরে ভিতরে
আগুন জ্বললেও তিনি নিশ্চুপ থাকলেন। বীনার ভাই মনে মনে বুদ্ধি আঁটলেন, এভাবে হবেনা,
তাই এলাকার কিছু ছেলেদের দিয়ে হৃদয়কে ভয় দেখালেন। ছেলেরা এমনও বলল ভবিষ্যতে যদি তোমাকে বীণার সাথে কথা
বলতে দেখি, তাহলে দেখে নাও এটা কি, ভালো করে দেখে নাও, মনে রেখো এই পিস্তলটা দিয়ে
আজ পর্যন্ত কোন শুট করা হয়নি এবং প্রথম শুটটা যেন তোমার কপালে না জুটে।
ভয় , অভিমান, দুঃখে হৃদয় বড় ভাইয়ের
বাসায় চলে গেল। হৃদয়ের বড় ভাই একটা এনজিও তে চাকরি করে, ঢাকায় থাকে। আচমকা হৃদয়কে
দেখে সালাম সাহেব বল্লেন হৃদয় তুই এতো রাতে! হৃদয় সব খুলে বলল। বড় ভাই হৃদয়কে খুব
ভালবাসতেন। বাবা মারা যাবার পর থেকে বড় ভাইই ছোট ভাইবোন সকলকে মানুষ করেছেন। বড়
ভাই হৃদয়কে অভয় দিলেন এবং বল্লেন মাস্টার্সটা ভালভাবে কপমপ্লিট কর তার পর তুমি যদি
বীনাকে বিয়ে করতে চাও, আমি যে করেই হোক বীণার সাথেই তোমাকে বিয়ে দিব।
মাঝখানে বেশ সময় গড়িয়ে গেল, হৃদয় ফাস্ট ক্লাস ১০ হয়ে মাস্টার্স কমপ্লিট করল।
যেই কথা সেই কাজ। বীণার সাথে হৃদয়ের বিয়ে হলো কিন্তু বীনার পরিবার মেনে নিল না। দুই
পরিবারের মধ্যে দা-মাছ সম্পর্ক হয়ে গেল।
বীণার পরিবার মেনে না নিলেও হৃদয়ের পরিবার মেনে নেওয়ায় বীনার মনে কোন দুঃখ
ছিলনা, বরঞ্চ বীনার মনে যেন সুখের ঢেউ আছড়ে পড়ছে। আর পড়বেই না বা কেন? বীনা ওর
পরিবারের গোঁয়ারতুমি সিদ্ধান্তকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে সুখের স্বর্গরাজ্যে প্রবেশ
করতে পেরেছে, জীবনে এর চাইতে বড় আর কি হতে পারে? এর মধ্যে হৃদয়ের ব্যাংকের বড় কর্মকর্তা পদে
চাকরি হল। সময়ের বাস্তবতায় দুই পরিবারের মধ্যে সুসম্পর্ক তৈরি হল। দুই পরিবারের
মধ্যে কথাবার্তা হল দিনক্ষণ নির্ধারণ করা হল ওদের বরণ করে নেয়ার।
বীনা প্রায়ই হৃদয়ের বুকে মাথা রেখে বলে, হৃদয় কেন যেন আমার খুব ভয় লাগে।
হৃদয়- কিসের ভয়, বীণা?
বীণা- এই যে দেখ, আমরা যে
এতো সুখে আছি, এ সুখ কপালে সইবে তো?
হৃদয়- বাদ দাও তো ওসব কথা?
ও সব তোমার মনের ধান্দা।
বীনা- তোমার কি মনে পড়ে
হৃদয়, আমাদের এ সুখের জন্য কত কষ্টই না করতে হয়েছে।
হৃদয়- আমি অতীতের ওসব কিছু
মনে করতে চাইনা। আমি শুধু এটাই ভাবছি পৃথিবীতে আমার মত কেউ সুখি নাই। তোমার মত
মহীয়সী নারীর ছোঁয়া পেয়ে জীবনে আমি সবচেয়ে বড় সুখি।
বীনা- তোমার মত একজন মহান
হৃদয়বান পুরুষই ছিল আমার জীবনের কামনা, এটা শুধু আমার কামনা নয়, এমন কামনা প্রতিটি
নারীর মনেই সুপ্ত থাকে। তোমার মত একজন জীবন সঙ্গী পেয়ে আমি জীবনে সীমাহীন তৃপ্ত।
জীবনে এমন সুখ আমি কখনো অনুভব করিনি। সুখের কথা কথা অনুভব করতে করতে বীনার চোখে
সুখের অশ্রু ঝরে, মনের অগোচরেই গাইতে থাকে___
এতো সুখ সইবো কেমন
করে
বুঝি কান্নাই লেখা ছিল ভাগ্যে
আমার
সুখেও কান্না পায় দুচোখ ভরে।।
দুখের স্রোতে ভাসা
ফুল
কোনদিন পায় না তো কূল।
আমি বুঝিবা পথের
ভুলে
এলাম নতুন কূলে।
এ পথ আবার দূরে যাবে কী সরে।।
স্বপ্নের মত মনে হয়
হারাবার তাই এতো ভয়।
তুবু যেটুকু পেলাম
আমি
প্রানের চেয়েও দামি।
চোখের জলে সবই যাবে কী ঝরে।।
( নোটঃ গানটিরশিল্পীঃ নিলুফার
ইয়াসমিন, সুরকারঃ খন্দকার নূরুল আলম,গীতিকারঃ মোঃ
রফিকুজ্জামান)
সুখের বন্যায় ভাসতে থাকে
হৃদয়-বীনার সংসার। হটাৎ একদিন করে বীণার মাথাব্যথা হয়। সামান্য মাথাব্যথা, তাই
বীণা বেশী গুরুত্ব দিলনা। কিন্তু ব্যথা বেড়ে যাওয়ায় ডাক্তারের কাছে যেতে হল।
ডাক্তার সামান্য কিছু ঔষধ দিলেন এবং বল্লেন, তেমন কোন সমস্যা নয়। এই ঔষধগুলি খেলেই
ভালো হয়ে যাবেন।
হৃদয়ের চিন্তা যেন বীনার
চেয়ে একটু বেশী। ডাক্তারকে বল্লেন, ডাক্তার সাহেব তেমন কোন সমস্যা নয় তো?
ডাক্তার- আপনি এতো চিন্তা
করছেন কেন? এতো সামান্য সমস্যা, অনেক বড় সমস্যা নিয়েও তো মানুষ আসে, তাঁরা তো এত
ঘাবড়ায় না। একটি বিষয় মনে রাখবেন, যিনি রোগ নিয়েছেন তিনিই নিরাময় করবেন, আমরা শুধু
অছিলা।
ঔষধের কোর্স সম্পন্ন করা হল
কিন্তু মাথা ব্যথা ভালো হচ্ছে তো না ই, বরঞ্চ আরও বাড়ছে। ডাক্তার উন্নত চিকিৎসার
জন্য রেফার করলেন। সমস্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হল। রেজাল্ট, বিধির লিখনে যা ছিল তাই। হৃদয়-বীনাকে নির্মম
সত্য কথা শুনতে হল।
নির্মম সত্য কথা শুনে
একে-অপরকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলেন। ওগো বিধি এইকি রেখেছিলে ভাগ্যে। হৃদয়, বীণাকে
বলছে, আমি যদি তোমাকে হারাই, তাহলে কি নিয়ে বাঁচবো আমি। আমার বেঁচে থেকেই বা কি
লাভ? বীণা
কষ্ট বুকের মধ্যে চেপে রেখে, যেন মনে কোন দুঃখ নেই, হৃদয়কে বলছে, হৃদয় তুমি এতো
চিন্তা করো না তো। এই দেখো আমি এখন অনেক সুস্থ। তুমি দেইখো আমি সুস্থ হয়ে যাবো।
জীবন-মরণ সবি তো আল্লাহ্র হাতে।
সকল চিকিৎসা বীনার জন্য একে
ব্যর্থ হলো। দিন দিন যন্ত্রণা ধৈর্যের সীমা ছাড়িয়ে যেতে লাগলো। মেডিকেল টিম থেকে
সিদ্ধান্ত হলো, ওদেরকে জানিয়ে দেয়া হল_ আমাদের যতটুকু করার ছিল করেছি বাকিটুকু
আল্লাহ্র হাতে।
হৃদয়-বীনার বুঝতে কিছু বাকী
থাকলনা। কঠিন নির্মম সত্য কথাটি বীনা জেনে গেল। বীণা জানতে পারলো সে আর বড়জোর ০৬
মাস বাঁচবে। ০৬ মাস বাঁচলেও শেষের দিনগুলি বীনার জন্য হবে অনেক কঠিন এবং অসহ্যের।
বীণা সিদ্ধান্ত নিল, বিধির
ডাকে সারা না দিয়ে যেহেতু কোন উপায় নেই, যেতেই হবে এই মায়াময় জগৎ সংসার ছেড়ে।
মৃত্যুকে সহজে কিভাবে আলিঙ্গন করা যায় ভাবলেন। ডাক্তারের পরামর্শে বীণা সিদ্ধান্ত
নিল ঘুমের ঔষধ খেয়ে মৃত্যুর কোলে ঘুমিয়ে পরেব।
২৯ বছর বয়সী বীনা মায়াময়
জগৎ সংসার ছেড়ে স্বেচ্ছামৃত্যুর ইচ্ছা থাকলেও বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় আইন। ইচ্ছেমৃত্যু
নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে নিয়ে আইনি লড়াই চালিয়েছিলেন বীনা। শেষমেশ বীণা ঠিক করে ০২
নভেম্বর হৃদয়ের জন্মদিন পালন করবেন এবং ০৩ নভেম্বর ডাক্তারের দেয়া ঔষধ খেয়ে
চিরদিনের জন্য ঘুমিয়ে পরবেন।
০২নভেম্বর হৃদয়ের জন্মদিনে
সকল আত্মীয় স্বজন এলে এক মর্মান্তিক দৃশ্যের অবতারণা হয়। এ যেন মানুষ বেঁচে থাকেই
রোজ কিয়ামতের দৃশ্য। সবাই বীণাকে জড়িয়ে ধরে কান্নাকাটি করছে। আগামী কালই যে বীণার
জন্য শেষ দিন। জেনে শুনে এমন মৃত্যুর দিন কিভাবে মেনে নেয়া যায়।
বীনা,
পৃথিবীতে শেষ দিনের ভিডিও করে, ভিডিওতে বীনা বলে, বিদায় আমার
প্রিয় বন্ধুরা। আজ সেই দিন যাকে আমি বেছে নিয়েছিলাম সমস্ত যন্ত্রনার অবসান ঘটাতে।
এই অসহ্য ব্রেন ক্যান্সার আমি সহ্য করতে পারছি না। আমার কাছ থেকে অনেক কিছুই নিয়ে নিয়েছেন
এই রোগ।
এক বন্ধ ঘরের ভিতর স্বামী ও পরিবার পরিজনদের সঙ্গে শেষ মুহূর্ত কাটায়
বীনা। ডাক্তারের দেওয়া ওষুধ খেয়ে ধীরে ধীরে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে।
(২৯ বছরের মার্কিন নারী ব্রিটানি
মেনার্ডের বাস্তব কাহিনী অবলম্বনে রচিত।)
তথ্য গ্রহণ: ডেইলি
মেইল http://www.priyo.com/2014/11/03/116606.html#sthash.NkliR0TS.dpuf