মানিকগঞ্জের ঐতিহ্য হাজারী গুড় : খ্যাতি ছড়িয়েছে দেশের বাইরেও







সাটুরিয়া (মানিকগঞ্জ) থেকে মো. সোহেল রানা খান : মানিকগঞ্জের দুটি জিনিসের নাম এক সময় এশিয়া মহাদেশ থেকে ইউরোপ মহাদেশ পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছিল। সে দুটি জিনিস হচ্ছে মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার তিল্লীর দই (দদী) ও অপরটি মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার ঝিটকার ঐতিহ্যবাহী হাজারী গুড়। এই গুড়ের সুনাম এক সময় বাংলাদেশ থেকে এশিয়া এমনকি ইউরোপ পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছিল। এমনকি ইংল্যান্ডের রানীকেও এই গুড় উপহার হিসেবে পাঠানো হয়েছিল। প্রায় দেড়শ’ বছর আগের হাজারী গুড়ের সুনাম আজো টিকিয়ে রেখেছে এদেশের একমাত্র হাজারী গুড় উৎপাদনকারী মানিকগঞ্জের ঝিটকার ঐতিহ্যবাহী হাজারী পরিবারসহ শতাধিক গাছী পরিবার। বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলাগুলোতেই শুধু খেজুরের চাষ হয়ে থাকে। এসব খেজুর গাছের দুই তৃতীয়াংশই রয়েছে মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলায়। সেখানে প্রতি একরে ১৫টি খেজুর গাছ দেখা যায়। হরিরামপুরের ঝিটকা খেজুর গুড় শিল্পের প্রধান কেন্দ্র। গুণে মানে ও স্বাদে গন্ধে এই গুড়ের বিস্তর সুনাম রয়েছে। মানিকগঞ্জে শীত মৌসুমে খেজুর গাছ একটা শিল্পে পরিণত হয়। রস-গুড় উৎপাদনে পেশাদার গাছী, কুমার, কামার, জ্বালানি ব্যবসায়ী, পরিবহনের জন্য ট্রাক মালিক, চালক, ভ্যান চালক, শ্রমিক আরতদারসহ বিভিন্ন  পেশার মানুষ সংযুক্ত হয়ে থাকে। এই গুড় প্রথম আবিষ্কার করেছেন মিনহাজ উদ্দিন হাজারী। তার নামেই এই গুড়ের নামকরণ করা হয়েছে ‘হাজারী গুড়’। হাজারী গুড়ের একটি লক্ষণীয় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে দু’হাতে গুড়ো করে ফুঁ দিলে তা ছাতুর মত উড়ে যায়। দাদার আমল থেকে গুড় উৎপাদন করে আসা গাছী আজমত আলি হাজারী (৬৫) জানান, ১৫ থেকে ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় এই গুড় উৎপাদনের নির্ভরযোগ্য সময়। আগের দিন বিকেলে গাছ কেটে হাঁড়ি বেঁধে দেয়া হয়। পরদিন ভোরে (সূর্য উঠার আগে) রস সংগ্রহ করে পরিষ্কার করে ছেঁকে মাটির তৈরি (জালা) পাত্রে চুলায় (বাইনে) জ্বালিয়ে বিশেষ পদ্ধতিতে তৈরি করা হয় হাজারী গুড়। এই পদ্ধতি এখন আর হাজারী পরিবারের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। প্রায়ই গাছীদের মধ্যেই ছড়িয়ে পড়েছে। এই গুড় দেখতে যেমনি সুন্দর খেতেও তেমনি সুস্বাদু। মিষ্টি ও টল টলে রস ছাড়া হাজারী গুড় হয় না। প্রতি কেজি গুড় ৬শ’ টাকা থেকে হাজার টাকা পর্যন্তও বিক্রি হয় বলে তিনি জানান। একই গ্রামের গাছী হযরত আলী জানান, বাজারে এক ধরনের হাজারী সদৃশ্য গুড় পাওয়া গেলেও মৌলিকভাবে তার ব্যবধান রয়েছে। এক শ্রেণীর অসাধু গুড় তৈরিকারক সাদা রং-এর গুড়ের উপর নাম খোদাই করে বাজারজাত করে সাধারণ ক্রেতাদের ধোঁকা দিয়ে থাকে। মানিকগঞ্জের স্বনামধন্য ঐতিহ্যবাহী খেজুরের রস গুড় প্রায় বিলীন হতে চলেছে। প্রতি বছর হাজার হাজার গাছ কেটে ইটভাটায় লাকরি হিসেবে পোড়ানো হচ্ছে এবং এই গুড় শিল্পকে ধ্বংস করা হচ্ছে। সরকারিভাবে উদ্যোগ নিয়ে এই শিল্পকে রক্ষা করা জরুরি বলে জানান এই এলাকার গুড় শিল্পীরা।

http://198.154.242.103/~dailyinq/2014/02/28/163916.php
এবং বিভিন্ন ব্লগ থেকে সংগৃহীত।

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad

সহিদুলের লেখা