গ্যাস্ট্রিক কোন রোগ নয়
গ্যাস্ট্রিক বিমাড়টা বাংলাদেশে অতিপরিচিত। যখন দেখি লোকজন নামি-দামি হাই
পাওয়ারের গ্যাস্ট্রিকের ঔষধ কিনচ্ছে তখন বুঝি এর কষ্ট কত ভয়ংকর। ভয়ংকর এই
গ্যাস্ট্রিক, আলসার হতে সহায়তা করে। আলসার থেকে মুক্তি পেতেইনা সকলে হাই
পাওয়ারের ঔষধ সেবন করছে এবং কিডনির বারোটা বাজচ্ছে। গ্যাস্ট্রিকের বাংলা
অর্থ অম্ল।
বাংলা সাহিত্যে বিশেষকরে রবীন্দ্রনাথের লেখাগুলোর বিভিন্ন স্থানে অম্লের
প্রসঙ্গ আনা হয়েছে। আসলে গ্যাস্ট্রিক কী তা আমারা সকলে জানি। এর ফলে পেট
থেকে গ্যাস নির্গত হতে থাকে। কারো কারো গলার কাছে জ্বালা পোড়া বা প্রদেহ
করে। কারো কারো চুকা ঢেক উঠে। অনেকে বমি করে গ্যাস্ট্রিক থেকে বা গলার
কাছের জ্বালাপোড়া থেকে মুক্তি পান। সুধু বাংলাদেশেই নয়, বিশ্বের অনেকে
দেশের অনেকেই বমি করে গলার ভেতর থাদ্য বিষয়ক জ্বালা পোড়া থেকে মুক্তি লাভ
করে। গ্যস্ট্রিক কেন হয় তা’ অনেকেই জানা থাকলেও এখানে উল্লেখ করা হলো –
০১. মানসিক অশান্তি – এক্সাইটি, স্ট্রেস, মানসিক কষ্ট-
মানসিকভাবে কোন কিছু নিয়ে টেনশন, চাপ, এক্সাইটি, কষ্ট, আঘাত প্রভৃতি
গ্যাস্ট্রিকের কারন হতে পারে।
০২. কু-খাদ্য – কুখাদ্য থেকে অধিকাংশ গ্যষ্ট্রিক হতে দেখা যায়।
অনেকে বলেন না খেয়ে থাকলে গ্যস্ট্রিক হয় যা মোটেও সঠিক নয়। রোজার মাসে
রোজাদার দীর্ঘ ১২/১৩ ঘন্টা যে কোন ধরনের খাবার থেকে বিরত থাকে তখন কাউকে
গ্যস্ট্রিক হতে দেখা যায় না। বরং তখন গ্যস্ট্রিক ভাল হয়ে যায়। এর কারন হলো
অধিকাংশের ক্ষেত্রে কু-খাবার থেকে গ্যস্ট্রিক হতে দেখা যায়। কু-খাদ্যগুলো
হলো – কন্ডেস মিল্ক নামক পামওয়েলের গাদ, টেষ্টিং সল্ট, সাদা মিহি দানার
লবন, সাদা চিনি, ডালডা বা যে সকল খাদ্য দ্রবে ডালডা আছে, কাপড়ের রং, ভেজাল
মসলা, ভেজাল তেল, অতিরিক্ত তেল, পচা-বাশি, যে কোন প্রকার কেমিক্যালযুক্ত
খাবার, হাইড্রোজ বা হাইড্রোজ মিশ্রিত খাবার, সোডা বা সোডা মিশ্রিত খাবার,
ভেজাল তরল বা দুধ, কড়া কফি, কড়া চা, প্রভৃতি।
০৩. থাবারের পরিমান- আমাদের অধিকাংশরাই অতিরিক্ত খাওয়াটাকে
ক্রেডিট মনে করি। সুধু খাওয়া নয়, খাওয়ানোটাও উত্তম অথিতিয়েতার নির্দশন
হিসেবে ধরে নেই। অথচ অতিরিক্ত খাবার গ্যষ্ট্রিকের অন্যতম কারন। ইসলামী নিয়ম
মতে দু’বেলা আহার উত্তম এবং প্রতিবেলাতে ব্যক্তির মোট খাবারের পরিমানের
তিন ভাগের একভাগ খাবার, একভাগ পানি ও একভাগ খালি রেখে খাবার সম্পন্ন করতে
পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
০৪. আসন- খাবারের সময় পা ভাজ করে, পেটে চাপ রেখে খাওয়া
স্বাস্থ্যকার। এতে গ্যস্ট্রিক হয় না। ইসলামী কায়দায় হাটু ভাজ করে খাওয়ার
পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
০৫. কথোপকথন-খাবারের সময় কথা বলা থেকে যতদুর সম্বব বিরত থাকতে
ইসলামের নীতিতে বলা হয়েছে। এমনকি খাবার গ্রহনের সময় সালাম বিনিময় থেকে বিরত
থাকতেও পরামর্শ দেয়া হয়েছে। খাদ্যগ্রহনের সময় মনোযোগ অন্যকোন স্থানে চলে
গেলে মস্তিস্ক বুঝতে পারে না প্লেটের খাবারের জন্য কতটুকু এসিড নিযর্গত করে
পাকস্থলিতে দিতে হবে। ফলে খাদ্য পাকস্থলিতে গিয়ে নানা ধরনের বিপত্তি করে
এবং হজম হতে বাধা দান করে।
০৫. এক দফায় খাবার নেয়া- হিন্দু ধর্মমতে খাবার একবারই প্লেটে
নিতে হবে। বার বার প্লেটে খাবার নেয়া যাবে না। এতে নির্ধারিত খাবার দেখে
মস্তিস্ক সঠিক পরিমান পাচকরস নিঃশ্বরন করে। অতিরিক্ত খাবার খেলে মস্তিস্কের
সঠিক পরিমান পাচক রস নিশ্বঃরন করতে পারে না।
০৭. ঘুম- এর সমস্যার কারনে বা কোষ্টকাঠিণ্য থাকার কারনেও গ্যাষ্ট্রিক দেখা দিতে পারে।
০৮. লিভার ফাংশন - গ্যাস্ট্রিক দেখা দিতে পারে লিভার ফাংশন কোন কারনে গোলযোগ দেখা দিলে।
০৯. ধুমপান বা বিভিন্ন প্রকার ঔষধ সেবনের কারনে গ্যাস্ট্রিক হতে পারে।
উপরোক্ত কারনগুলোকে ভালভাবে পর্যালোচনা করে নিয়মমত খাদ্যাভাস অনুশীলন
করলেই গ্যাস্ট্রিকের জন্য কোন প্রকার ঔষধ সেবন করতে হবে না। কারন
গ্যাস্ট্রিক কোন রোগ নয়। এটা পরিপাকতন্ত্রের ব্যাঘাত জনিত একটি উপসর্গ
মাত্র।